Thursday, July 4, 2024

তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে

আজ ৪ঠা জুলাই। আজ থেকে ১২২ বছর আগে, ১৯০২ সালের এই তারিখেই (দিনটি শুক্রবার ছিল) স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর স্থূল শরীর ত্যাগ করেছিলেন। বহুজনের প্রিয়ভাজন, পূজ্য, অনুপ্রেরণাদায়ী সন্ন্যাসী মাত্র ৩৯ বছর বয়সে দেহত্যাগ করলেন। 

দিনটির প্রতি অনুধাবন করলে দেখা যায় (সারাদিনের ঘটনা পঞ্জি লেখার শেষে লিংকে দেওয়া রয়েছে), সেই দিনটিতে তিনি একটু ভালো বোধ করছিলেন এবং সারা দিনটিতেই তিনি নানারকম কর্মে লিপ্ত থেকেছেন এবং আনন্দ দিয়েছেন। যারা সেদিন তাঁর সঙ্গ লাভ করেছিলেন, তাঁরা জানতেন স্বামীজীর শরীর বিভিন্ন ভাবে আহত, কিন্তু কেউই ধারণা করতে পারেননি যে, যার সঙ্গে সেই দিনের সেই মুহূর্তগুলি কাটিয়েছেন, পরের দিনই তাঁর স্থূল শরীর, তাঁর কণ্ঠ, তাঁর দৃষ্টি, তাঁর স্নেহ স্পর্শ --- এইগুলি থেকে হঠাৎ করে বঞ্চিত হতে হবে। কি বিষম ব্যথা --- কাতর ভাবে তাঁদের পরের কিছু দিন/বছর কেটেছে --- তা অনুধাবন করা খুব কঠিন নয়। আসলে যে ব্যক্তি তাঁর সমস্ত শক্তি দিয়ে ভারতবর্ষকে ভালোবেসেছেন, ভারতবাসীকে ভালোবেসেছেন এবং যেভাবে নিজেকে নিংড়ে দিয়ে ভারতবর্ষের এবং ভারতবাসীর সেবা করেছেন, তা ভারতবর্ষ তো আগে দেখেনি --- তিনি যে সেবা দিয়েছেন তা শিব জ্ঞানে --- ধনী, দরিদ্র, জ্ঞানী, অজ্ঞানী, মুচি মেথর, ব্রাহ্মণ, চণ্ডাল --- সকলকেই শিব রূপে জ্ঞান করে সেবা ভাব দিয়ে তাঁদের সঙ্গে মিশেছেন, মিথষ্ক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছেন। সাধে কি রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, "If you want to know India, read Vivekananda." ঈশ্বর দর্শনে ভারতবর্ষের চিরকালীন প্রচেষ্টা, লিপ্ত থাকা, সকল ধর্মকে সত্য বলে স্বীকার করা এবং জায়গা দেওয়া, --- আধ্যাত্মিক পথে ভারতবর্ষ যে অনন্য, তা বিশ্বের দরবারে স্বামীজী প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছেন তাঁর স্বল্পায়ু জীবনেই। সেই ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েই, আধ্যাত্মিক পথের বহু সাধক বর্তমানে বিশ্বের দরবারে ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠত্ব বারংবার প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

এমন মহামানব ভারতবর্ষে বিরল --- সেই মহামানবের স্নেহস্পর্শ যারা পেয়েছেন, তাঁরা ধন্য --- যারা তাঁর মুখ নিঃসৃত বাণী সামনে থেকে শ্রবণ করেছেন, তাঁরাও ধন্য। যারা তাঁর সঙ্গলাভ করেছেন তারাও ধন্য। স্বামীজীরই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে যারা মানব সেবায় নিয়োজিত, তাঁরাও ধন্য --- কেননা স্বামীজী নিজে বলে গেছেন, তিনি তাঁর শরীরটি জীর্ণ বস্ত্রের মত ত্যাগ করলেও, তিনি ততদিন কর্ম হতে ক্ষান্ত হবেন না যতদিন না সমস্ত জগৎ সেই এক ঈশ্বরের সাথে মিলিত হচ্ছে।

রবীন্দ্রনাথেরই কথায় তোমায় প্রার্থণা জানাই, 
তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে
....
এসো দুঃখে সুখে, এসো মর্মে,
এসো নিত্য নিত্য সব কর্মে,
এসো সকল-কর্ম-অবসানে।

 জয়তু স্বামীজী 🌼

৪ঠা জুলাই, ১৯০২ এর ঘটনাপঞ্জী https://vivekavani.com/swami-vivekananda-death-4-july-1902/

নীচে বেলুড় মঠে স্বামীজীর ব্যবহৃত ঘরের ছবি (৪ঠা জুলাই, ২০২৪) এবং তাঁর একটি উক্তি (বাংলা আর ইংরেজিতে)

বেলুড়় মঠে স্বামিজীর শয়ণ কক্ষের সেই ক্যাম্প খাট, এই খাটেই স্বমিজী তাঁর স্থুল শরীর ত্যাগ করেছিলেন।

Wednesday, July 3, 2024

প্রভু কৃপা হি কেবলম্

৩রা জুলাই, ২০২৪

এইবারে বাড়ি আসার পর, দিলীপ মহারাজের (অধ্যক্ষ মহারাজ, মেদিনীপুর রামকৃষ্ণ মিশন, স্বামী প্রার্থণানন্দ) সঙ্গে ফোনে বার্তালাপের সময় উনি বাবা মাকে নিয়ে মেদিনীপুর মিশনে গিয়ে প্রসাদ পেতে বলেন। গতকাল রাত্রে ঠিক হল আজ মা'কে মেদিনীপুর রামকৃষ্ণ মিশন নিয়ে যাব আর প্রসাদ পাব। যেহেতু গাড়ি নিয়ে যাব, তাই মিতা (ভট্টাচার্য্য, আই আই টি ক্যাম্পাসে আমাদের প্রাক্তন প্রতিবেশী) কাকিমা আর শান্তি (শান্তিনাথ ঘোষ, আই আই টি খড়গপুর এর প্রাক্তন কর্মচারী এবং রামকৃষ্ণ ভাবন্দোলনের একনিষ্ঠ ভক্ত) কাকু'কে রাতেই ফোন করে আহ্বান জানাই... অশৌচ থাকার দরুণ শন্তিকাকু না যাওয়ায়, রঞ্জন (রঞ্জন শীল, প্রাক্তন রেল কর্মচারী, আমাদের বর্তমান প্রতিবেশী এবং অখণ্ডমণ্ডলেশ্বর স্বামী স্বরূপানন্দের একনিষ্ঠ ভক্ত) 'দা সকালে যুক্ত হলেন। সুহৃদের অরুণ ও বলরাম 'কে মিশনে দুপুরে প্রসাদ পাওয়ার জন্যেও আহ্বান জানালাম। উদ্দেশ্য ছেলেদের অধ্যক্ষ মহারাজের (দিলীপ মহারাজ, স্বামী প্রার্থণানন্দ) সঙ্গে একটু পরিচিত করা। ... মন্দিরে প্রাথমিক প্রণাম সেরে, দীক্ষা দিতে আসা ভাইস প্রেসিডেন্ট মহারাজ স্বামী দিব্যানন্দ মহারাজের প্রণাম সারা হল। মহারাজ বর্তমানে কাশীপুর উদ্যান বাটিতে অধ্যক্ষ হিসেবে রয়েছেন। প্রণাম সারা হলে, আবার মন্দিরে বসে যখন প্রণাম করছি, দিলীপ মহারাজ আমায় তাঁর অফিসে ডেকে নিলেন। মহারাজ আমায় স্নেহ করেন --- তাই মাকে একটা প্রসাদি কাপড় পরার জন্য দিলেন। এর আগেও (বছর দশেক আগে হবে) মা একটা প্রসাদি কাপড় পেয়েছিলেন তবে এক আত্মীয় মারফত। আমার খুব ইচ্ছে ছিল, আমার মাধ্যম দিয়েও মা, সারদা মায়ের প্রসাদি কাপড় পা'ন। মিশনে যাতায়াতের ফলে, পরিচিত মহারাজদের বললেই হয়তো পাওয়া যেত, কিন্তু কারুর কাছে কিছু চাইতে বরাবরই সংকোচ বোধ হয়েছে। তাই মনের মধ্যেই এই বাসনা রয়ে যায় এবং মনের কোণে সুপ্ত প্রার্থণা রয়ে যায় যে এই ক্ষুদ্র বাসনা কোনোভাবে পূর্ণ হয়। আজ যখন মহারাজ, মিশনের একনিষ্ঠ এক কর্মচারীকে ডেকে বললেন, তিনি আমার মা'কে প্রসাদি কাপড় দিতে চান, তখন স্থিরনেত্রে তাকিয়ে রয়েছি। আর মহারাজ যখন নিজের হাতে সারদা মায়ের প্রসাদী কাপড় মা'কে দিয়ে বললেন, "বিশেষ বিশেষ দিনে এই কাপড়টি পরবেন।", আমি তখন এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলছি আর মনে মনে বলছি, যাক একটি বাসনা পূর্ণ হল। ঠাকুরকেও অন্তরের কৃতজ্ঞতা নিবেদন করলাম --- তিনি যে এই কৃপা করেছেন, তাঁকে অজস্র ধন্যবাদ। মনের মধ্যে আরো প্রার্থণা, তিনি যখন কৃপা করেছেন, তিনি যেন আমাকে দিয়ে তাঁর কাজ করিয়ে নেন -- যাতে একটা দাগ রেখে দেওয়া যায়। 

জয় ঠাকুর!!

আজ মেদিনীপুর মঠে ঠাকুরের অবস্থান 🙏🏼