দিনটির প্রতি অনুধাবন করলে দেখা যায় (সারাদিনের ঘটনা পঞ্জি লেখার শেষে লিংকে দেওয়া রয়েছে), সেই দিনটিতে তিনি একটু ভালো বোধ করছিলেন এবং সারা দিনটিতেই তিনি নানারকম কর্মে লিপ্ত থেকেছেন এবং আনন্দ দিয়েছেন। যারা সেদিন তাঁর সঙ্গ লাভ করেছিলেন, তাঁরা জানতেন স্বামীজীর শরীর বিভিন্ন ভাবে আহত, কিন্তু কেউই ধারণা করতে পারেননি যে, যার সঙ্গে সেই দিনের সেই মুহূর্তগুলি কাটিয়েছেন, পরের দিনই তাঁর স্থূল শরীর, তাঁর কণ্ঠ, তাঁর দৃষ্টি, তাঁর স্নেহ স্পর্শ --- এইগুলি থেকে হঠাৎ করে বঞ্চিত হতে হবে। কি বিষম ব্যথা --- কাতর ভাবে তাঁদের পরের কিছু দিন/বছর কেটেছে --- তা অনুধাবন করা খুব কঠিন নয়। আসলে যে ব্যক্তি তাঁর সমস্ত শক্তি দিয়ে ভারতবর্ষকে ভালোবেসেছেন, ভারতবাসীকে ভালোবেসেছেন এবং যেভাবে নিজেকে নিংড়ে দিয়ে ভারতবর্ষের এবং ভারতবাসীর সেবা করেছেন, তা ভারতবর্ষ তো আগে দেখেনি --- তিনি যে সেবা দিয়েছেন তা শিব জ্ঞানে --- ধনী, দরিদ্র, জ্ঞানী, অজ্ঞানী, মুচি মেথর, ব্রাহ্মণ, চণ্ডাল --- সকলকেই শিব রূপে জ্ঞান করে সেবা ভাব দিয়ে তাঁদের সঙ্গে মিশেছেন, মিথষ্ক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছেন। সাধে কি রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, "If you want to know India, read Vivekananda." ঈশ্বর দর্শনে ভারতবর্ষের চিরকালীন প্রচেষ্টা, লিপ্ত থাকা, সকল ধর্মকে সত্য বলে স্বীকার করা এবং জায়গা দেওয়া, --- আধ্যাত্মিক পথে ভারতবর্ষ যে অনন্য, তা বিশ্বের দরবারে স্বামীজী প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছেন তাঁর স্বল্পায়ু জীবনেই। সেই ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েই, আধ্যাত্মিক পথের বহু সাধক বর্তমানে বিশ্বের দরবারে ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠত্ব বারংবার প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
এমন মহামানব ভারতবর্ষে বিরল --- সেই মহামানবের স্নেহস্পর্শ যারা পেয়েছেন, তাঁরা ধন্য --- যারা তাঁর মুখ নিঃসৃত বাণী সামনে থেকে শ্রবণ করেছেন, তাঁরাও ধন্য। যারা তাঁর সঙ্গলাভ করেছেন তারাও ধন্য। স্বামীজীরই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে যারা মানব সেবায় নিয়োজিত, তাঁরাও ধন্য --- কেননা স্বামীজী নিজে বলে গেছেন, তিনি তাঁর শরীরটি জীর্ণ বস্ত্রের মত ত্যাগ করলেও, তিনি ততদিন কর্ম হতে ক্ষান্ত হবেন না যতদিন না সমস্ত জগৎ সেই এক ঈশ্বরের সাথে মিলিত হচ্ছে।
রবীন্দ্রনাথেরই কথায় তোমায় প্রার্থণা জানাই,
তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে
....
এসো দুঃখে সুখে, এসো মর্মে,
এসো নিত্য নিত্য সব কর্মে,
এসো সকল-কর্ম-অবসানে।
জয়তু স্বামীজী 🌼
৪ঠা জুলাই, ১৯০২ এর ঘটনাপঞ্জী https://vivekavani.com/swami-vivekananda-death-4-july-1902/
নীচে বেলুড় মঠে স্বামীজীর ব্যবহৃত ঘরের ছবি (৪ঠা জুলাই, ২০২৪) এবং তাঁর একটি উক্তি (বাংলা আর ইংরেজিতে)